কিভাবে কোরবানির প্রাণী বাছাই করবেন?
2020-06-26
সামনেই আসছে কোরবানির ঈদ, এই ঈদে ইসলাম ধর্মালম্বী জনগণ ইসলামি বিধান অনুযায়ী সুস্থ এবং নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। এইক্ষেত্রে কোরবানির জন্য সঠিক প্রাণীটি বাছাই করা খুবই জরুরি। তাই আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে কোরবানির জন্য উপযুক্ত প্রাণী বাছাই করতে হয়।
ইসলামি বিধান অনুযায়ী, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে, গরু-মহিষ দুই বছর পূর্ণ হতে হবে, উট পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে (হিদায়া খণ্ড-৪, পু. ১০৩)। খুব সহজেই প্রাণীর বয়স নির্ধারণ করা যায়।
গরু বা মহিষের মুখ হা করালে, দেখা যাবে নীচের পাটিতে সামনের অংশে দাঁত আছে, উপরের পাটিতে নেই। এক বছর বয়সে জন্মের সময়ের দুইটি (দুধ) দাঁত পরে যায়, দুইটি বড় দাঁত গজায়। এমনিভাবে প্রতিবছর দুটি করে বড় বড় দাঁত গজায়। চার বছর বয়সে মােট আটটি বড় দাঁত পাওয়া যায়, গরুটি সম্পূর্ন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। ছাগলের ক্ষেত্রে ১৩ মাস বয়সে নীচের পাটির সামনের দুটি দুধ দাঁত পরে গিয়ে, দুইটি বড় দাঁত গজায়। এমনিভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর দুটি করে বড় বড় দাঁত গজায়। ভেড়ার ক্ষেত্রে ছাগলের চেয়েও এক মাসের চেয়ে কিছু বেশী সময় লাগে।
বাহ্যিক গুনাবলী পর্যবেক্ষণ করে কোরবানীর জন্য জায়েজ পছন্দের প্রাণীটির সুস্থতাও পরীক্ষা করা জরুরী। কয়েকটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই একটি পশুর সুস্থতা নির্ধারণ করা যায়। গরু বা মহিষের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ১০০-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মহিষ বা গরুর গায়ে জ্বর আছে কিনা নির্ধারণ করতে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে, গরুর নাকের ছিদ্র দুইটির মধ্যখানে (মাজল) ভিজা কিনা এবং শরীরের লােম দাড়িয়ে আছে কি না?
গায়ের লােম দাঁড়িয়ে থাকলে বা নাকের মধ্যখানে শুকনা হলে বুঝতে হবে মহিষ বা গরুর গায়ে জ্বর আছে। এছাড়া গরু বা মহিষের কানের পাশে নিজ হাতের তালুর পিষ্ঠ দিয়ে স্পর্শ করলে মহিষ বা গরুর শরীরের তাপ অনুভব করা যায়। এরপর লক্ষণীয় বিষয়গুলি হচ্ছে পশুটি স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছে কি? নাক বা মুখ হতে কোন শ্লেষ্মা বা লালা ঝরছে কি?
স্বাভাবিক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি প্রতি মিনিটে ১০-৩০ বার, পেটের উঠানামা লক্ষ করলেই এটা নির্ধারণ করা যাবে। স্বাভাবিক নাড়ির হার (হার্টবিট) প্রতিমিনিটে ৪০-৮০ বার। চোয়ালের নীচে বা লেজের নীচে স্পর্শ করে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে। সুতরাং নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক থাকা, গরুর শরীরের তাপ স্বাভাবিক পেলে এবং খাদ্য স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করলে, নাক মুখ হতে কোন শ্লেষ্মা বা লালা না ঝরলে বা চোখ দিয়ে পানি না ঝরলে, শরীরের লােম দাড়িয়ে না থাকলে, হাটা চলাফেরা স্বাভাবিক থাকলে মল মূত্রের পরিমান আকার ও রং স্বাভাবিক থাকলে প্রাণীটি সুস্থ আছে বলে বুঝতে হবে।
গরু হাটে গিয়ে বা অনলাইনে গরুর ছবি দেখে কৌতূহলবশত আমরা চিন্তা করি গরুটির ওজন কত হতে পারে, আন্দাজ করার চেষ্টা করি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খুব সহজেই গরুর সঠিক ওজন নির্ণয় করা সম্ভব। গরুর শরীরের সর্বশেষ স্থান Point of Buttock (লেজের পাশে) থেকে সামনের দিকে ডান বা বাম দিকে সামনের পায়ের উপরে Elbow point বরাবর পর্যন্ত ফিতা দিয়ে (ইঞ্চি) মেপে নেই। এরপর বুকের বেড় (সামনের দুই পায়ের ঠিক পিছনে গরুর পিঠ ও বুক পেঁচিয়ে) মেপে নেই। ওজন বের করার জন্য ফর্মূলা হচ্ছেঃ
(দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় × বুকের বেড়) ÷ ৬৬০= গরুর আনুমানিক ওজন (কেজিতে)।
উদাহরণস্বরূপ, গরুটির দৈর্ঘ্য ৫৫ ইঞ্চি, বুকের বেড় ৭৪ ইঞ্চি, ওজন কত? ফর্মূলা অনুযায়ী (৫৫ × ৭৪ × ৭৪) ÷ ৬৬০ = ৪৫৬ কেজি (প্রায়)
আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনি সহজেই বেছে নিতে পারবেন কোরবানির জন্য উপযুক্ত প্রাণীটিকে, কবুল হোক আপনার নিবেদন।
সূত্রঃ ডঃ আওলাদ হোসাইন, বাংলা ইনসাইডার